ঢাকা রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

আমাদের গৌরব জাগ্রত চৌরঙ্গী

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫, ০৮:০০ পিএম
জাগ্রত চৌরঙ্গী
জাগ্রত চৌরঙ্গী

ডান হাতে গ্রেনেড, বাঁ হাতে রাইফেল। লুঙ্গি পরা, খোলা শরীর, দৃপ্ত পায়ে পেশিবহুল মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্যটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে দাঁড়ানো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের গল্প উঠলে চোখে ভাসবেই জাগ্রত চৌরঙ্গী। এটিই দেশে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৯ মার্চের সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধে নিহত ও আহত বীরদের অসামান্য আত্মত্যাগ স্মরণে ১৯৭৩ সালে নির্মিত হয়েছিল জাগ্রত চৌরঙ্গী। ঢাকা আর্ট কলেজের সেই সময়ের অধ্যক্ষ দেশের খ্যাতিমান ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছিল এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকর্ম।

তৎকালীন গাজীপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বীরবিক্রম ভাস্কর্যটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২৪ ফুট ৫ ইঞ্চি বেদিসহ জাগ্রত চৌরঙ্গীর উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। কংক্রিট, গ্রে ও হোয়াইট সিমেন্টের ঢালাইয়ে নির্মিত ভাস্কর্যটিতে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০০ জন এবং ১১ নম্বর সেক্টরের ১০৭ জন শহীদ সেনা ও মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক সহযোগী হামিদুজ্জামান খানকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। কাজ শেষ হয় ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে। জাগ্রত চৌরঙ্গীর প্রকৌশলী ছিলেন আবদুর রশিদ, তাঁর দুই সহকারী ছিলেন এম আহমদ ও আবদুল হক। নির্মাণ তত্ত্বাবধানে ছিলেন মো. আসলুল হক ও আবদুল হক। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সুবেদার খন্দকার মতিউর রহমান বীরবিক্রম। নির্মাণকাজে জড়িত সবাই ছিলেন ঢাকা আর্ট কলেজের। আলোকসজ্জার দায়িত্বে ছিল গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে জয়দেবপুর (পরে গাজীপুর) সেনানিবাসের ভাওয়াল রাজবাড়িতে ছিল পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কার্যালয়। ২৫-৩০ জন ছাড়া সবাই ছিলেন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা। পাকিস্তানিরা বাঙালি দমনের নীলনকশা অনুযায়ী ১৫ মার্চের মধ্যে রাইফেল জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বাঙালি সেনারা রাজি না হলে ১৯ মার্চ সকালে ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিতে জয়দেবপুর সেনানিবাসে আসেন। এ খবর জানাজানি হলে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা লাঠি, তীর-ধনুক নিয়ে জয়দেবপুর বটতলায় জড়ো হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ওই যুদ্ধে মনু খলিফা, ফুটবলার হুরমত আলী ও কানু মিয়া এবং কিশোর নিয়ামত শহীদ হয়। জয়দেবপুরে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে এই সম্মুখযুদ্ধের পর সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সারা দেশে স্লোগান ওঠে, জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো

গাজীপুরের ইতিহাসবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯ মার্চের সশস্ত্র যুদ্ধে শহীদ হুরমত-মনু খলিফাদের স্মৃতি অমর করতে গাজীপুর ক্যান্টনমেন্টের ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল) আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বীরবিক্রম গাজীপুরে ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নেন। ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য তিনি দায়িত্ব দেন ভাস্কর আব্দুর রাজ্জাককে। ভাস্কর্যটি তৈরিতে ৩০ হাজার ইট, ইটের গুঁড়া, রড এবং প্রায় ৩০০ ব্যাগ সিমেন্ট লাগে। ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ চলে আর্ট কলেজে। কাজ শেষ হলে ক্রেনের সাহায্যে সেটি ট্রাকে তুলে ঢাকা থেকে গাজীপুরে আনা হয়।

ভাস্কর্যটি নির্মাণে সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়েছেন ভাস্কর আব্দুর রাজ্জাক। তিনি দিনরাত মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদের বাসায় থেকে কাজ করেছেন। আমীন আহম্মেদ চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে শহীদ হুরমত আলীর মা কদরজানকে দিয়ে ভাস্কর্যের উদ্বোধন করাতে। কিন্তু কদরজান মারা যাওয়ায় তা আর হয়নি। পরে ভাস্কর্যটি আর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আইএমএফের পরামর্শ / ডলারের দাম বাজারীকরণের বিপদ

সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা

ভ্রমণপ্রেমী গভর্নরের নয় মাসে ৬৫ দিন বিদেশ সফর

বাজেটে স্বস্তি নেই মধ্যবিত্তের

কোদালিয়া গণহত্যা / নগরকান্দার রক্তঝরা ইতিহাস

১ জুন ১৯৭১: নগরকান্দা গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি

মানুষ কার কাছে আশ্রয় চাইবে

আজহারুল ইসলামের রায়: বিচারের মানদণ্ড নাকি ন্যায়বিচারের প্রশ্ন?

অভয়নগরের ভয়, আমাদের পিছু ছাড়ছে না

চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি ইজারাদারি: আয় প্রবৃদ্ধির বাস্তবতা বনাম হুমকি

১০

৩১ মে ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিকাল

১১

দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতির সংকট ও ‘থ্রি এম’ সমাধান

১২

২৯ মে, ১৯৭১: বরগুনার গণহত্যা, আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা

১৩

‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’

১৪

২৮ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিন

১৫

বাগবাটি গণহত্যা: সিরাজগঞ্জের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস

১৬

২৭ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় দিন

১৭

গণ-অভ্যুত্থানগুলোর পরিণতি হতাশাজনক

১৮

জনগণ আসলে কী চায়

১৯

শহীদ বুদ্ধিজীবী / সুধীর চন্দ্র মজুমদার

২০