ঢাকা রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

তরফদার আতিয়ার রহমান

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
তরফদার আতিয়ার রহমান
তরফদার আতিয়ার রহমান

একাত্তরের ১৭ জুলাই শুক্রবার ভোরবেলা। নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামে হানা দেয় রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী। ঘিরে ফেলে শিক্ষক তরফদার আতিয়ার রহমানের বাড়ি। বাইরে শোরগোল শুনে তিনি বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে বাইরে আসেন। হানাদার সেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। এভাবে সেদিন গ্রামের ১৯ জনকে তারা বাড়ি থেকে তুলে নেয়। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি অনেকেই দেখছিলেন। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেননি।

ঘাতকের দল আটক সবাইকে নিয়ে যায় নড়াইল শহরের তাদের ক্যাম্প ওয়াপদা ডাকবাংলোয় (বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়)। তাঁদের মধ্যে আতিয়ার রহমানসহ ৮ জনকে রেখে অন্য ১১ জনকে মারধর করে বিকেলে ছেড়ে দেয়। এই আটজনকে তারা টানা তিন দিন নির্মম নির্যাতন করে। তাঁদের দিয়েই ডাকবাংলো চত্বরে গর্ত করায়। এরপর ২০ জুলাই ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষক আতিয়ার রহমানসহ সবাইকে হত্যা করে সেই গর্তে মাটিচাপা দেয়।

আতিয়ার রহমানের সঙ্গে সেদিন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন তুলারামপুর গ্রামের দুই ভাই রফিকুল ইসলাম তরফদার ও স্নাতকের ছাত্র মাহাতাব উদ্দীন তরফদার, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলতাফ হোসেন তরফদার, কৃষক কাইজার রহমান মোল্লা ও তাঁর ভাতিজা কৃষক মোকাম মোল্লা, ইপিআরের গাড়িচালক মকবুল হোসেন শিকদার ও গ্রামপ্রধান আবদুস সালাম তরফদার।

আতিয়ারের স্ত্রী আয়শা খাতুন (৭৭) এখনো বেঁচে আছেন। সেই দুঃসহ দিনের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ঘরের দরজা খোলার পর সেনারা তাঁকে উঠানে ডেকে জিজ্ঞাসা করে অস্ত্র আছে না কি? তিনি না, অস্ত্র নেই”—এই টুকু কথার পরই তাদের সঙ্গে যেতে বলে। পানি খেতে চেয়েছিলেন তিনি। ছোট মেয়ে ওহিদা খাতুন গ্লাসে করে পানি নিয়ে যায়। কিন্তু তারা পানিও খেতে দেয়নি। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।

আতিয়ার রহমানের জন্ম ১৯৩৮ সালে তুলারামপুর গ্রামে। বাবা নাজিম উদ্দীন তরফদার ছিলেন কৃষিজীবী। মা জাহানারা খাতুন গৃহিণী। চার ভাইয়ের মধ্যে আতিয়ার মেজ। ছোট ভাই ওবায়দুর তরফদার মুক্তিযোদ্ধা ও তুলারামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। অন্য দুই ভাই খয়বার তরফদার ও আজমল তরফদার ছিলেন কৃষিজীবী। আজমল মারা গেছেন। সেদিন হানাদাররা আতিয়ার রহমানের সঙ্গে ভাই খয়বার ও আজমলকেও ধরে নিয়েছিল। পরে তাঁদের ছেড়ে দেয়। আতিয়ার রহমানের স্ত্রী আয়শা খাতুন (৭৭) বেঁচে আছেন। তিন মেয়ে ও এক ছেলে তাঁদের। ছেলে মুন্নু তরফদার ব্যবসায়ী। মেয়েরা গৃহিণী।

আতিয়ার রহমান যশোর এম এম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে যশোরের বাঘারপাড়ার দোহাকুলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড করে ১৯৬৫ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত এখানেই শিক্ষকতা করছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা এম এম গোলাম কবীর বলেন, শহীদ আতিয়ার রহমান ছিলেন খ্যাতিমান শিক্ষক। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করাসহ নানাভাবে সাহায্য করেছেন। তিনিসহ যে আটজন শহীদ হয়েছিলেন, তাঁদের নাম সরকারি তালিকাভুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এখনো তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত না হওয়া দুঃখজনক।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানুষ কার কাছে আশ্রয় চাইবে

আজহারুল ইসলামের রায়: বিচারের মানদণ্ড নাকি ন্যায়বিচারের প্রশ্ন?

অভয়নগরের ভয়, আমাদের পিছু ছাড়ছে না

চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি ইজারাদারি: আয় প্রবৃদ্ধির বাস্তবতা বনাম হুমকি

৩১ মে ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিকাল

দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতির সংকট ও ‘থ্রি এম’ সমাধান

২৯ মে, ১৯৭১: বরগুনার গণহত্যা, আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা

‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’

২৮ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিন

বাগবাটি গণহত্যা: সিরাজগঞ্জের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস

১০

২৭ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় দিন

১১

গণ-অভ্যুত্থানগুলোর পরিণতি হতাশাজনক

১২

জনগণ আসলে কী চায়

১৩

শহীদ বুদ্ধিজীবী / সুধীর চন্দ্র মজুমদার

১৪

শহীদ বুদ্ধিজীবী / মহসিন আলী

১৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী / আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ

১৬

শহীদ বুদ্ধিজীবী / ফাদার লুকাশ মারান্ডি

১৭

বুরুঙ্গা গণহত্যা: ৯৪ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা

১৮

২৬ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল দিন

১৯

২৫ মে ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী

২০