ঢাকা রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

বলহরি দাশ

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম
বলহরি দাশ

বলহরি দাশ ছিলেন খুব ভালো বেহালাবাদক। নাটক, যাত্রাপালায় অভিনয়ও করতেন। যন্ত্রসংগীতশিল্পী হিসেবেও টাঙ্গাইল অঞ্চলে যথেষ্ট খ্যাতিমান ছিলেন। আর প্রতিবাদী স্বভাব ছিল তাঁর। পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় ঘাতকের দল তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

বলহরি দাশের জন্ম ১৯২৯ সালে টাঙ্গাইল শহরতলির কাগমারী পোদ্দার পাড়ায়। বাবা ঋষিকেশ দাশ, মা মায়া রানী দাশ। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। ঋষিকেশ দাশ ছিলেন সেকালে টাঙ্গাইলের নামকরা বেহালাবাদক ও চারুশিল্পী। তিনি আদরের বড় ছেলের হাতে শৈশবেই বেহালা তুলে দেন। বাবার কাছেই বাদন শিখেছেন বলহরি। বাড়ির পরিবেশেই ছিল শিল্প-সংগীত।

বলহরি দাশের পারিবারিক পেশা ছিল যন্ত্রাংশ ও মাইক, আলোকসজ্জার সরঞ্জামের ব্যবসা। এই সূত্রে এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বহুকাল থেকেই তাঁদের যোগাযোগ ছিল। অভিনয় ও বেহালাবাদনের পাশাপাশি বড় হয়ে তিনি বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। তাঁদের মহল্লাটি ছিল হিন্দুপ্রধান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনেকেই শরণার্থী হিসেবে ভারতে চলে যান। তবে তাঁরা এলাকাতেই ছিলেন। বলহরি দাশরা ভাবতেন, তাঁদের কেউ কোনো ক্ষতি করবে না।

সেদিন ছিল একাত্তরের ২০ জুলাই। রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। আবার যুদ্ধের সময়। তাই সন্ধ্যার খানিক পর থেকেই পুরো এলাকা নিস্তব্ধ। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ স্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে ভেসে আসে আর্তনাদ। সেই রাতের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলহরি দাশের বড় ছেলে পরেশ চন্দ্র দাশ জানান, পাশের বাড়ির এক প্রতিবেশী এসে তাঁর বাবাকে জানান, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মহল্লায় হামলা করেছে। তারা লোকজনকে মারধর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ কথা শুনে তাঁর বাবা টর্চলাইট নিয়ে এগিয়ে যান। টর্চের আলো ফেলতেই তিনি দেখতে পান হানাদার সেনাদের সঙ্গে রয়েছে এলাকারই মুখচেনা কয়েকজন রাজাকার। তারা স্থানীয় কলেজশিক্ষক নিত্যানন্দ পাল, ব্যবসায়ী শান্তি সাহা ও প্রমোদ পালকে নির্যাতন করছে। পরিচিত ছিল বলে রাজাকারদের কাছে তিনি জানতে চান এই নিরীহ মানুষদের তারা কেন নির্যাতন করছে? তিনি তাঁদের ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু এর ফল হলো বিপরীত। রাজাকারদের চিনে ফেলায় ওই তিনজনের সঙ্গে তাঁকেও ঘাতকের দল তুলে নিয়ে যায়।

পরদিন সকালে বলহরি দাশের ভাইয়েরা স্থানীয় শান্তি কমিটি ও মুসলিম লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, বলহরিদের টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে হানাদার সেনাদের ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁদের মুক্ত করতে পারেননি। দুই দিন সেখানে নির্যাতনের পর ঘাতকের দল তাঁদের জেলা সদরের পানির ট্যাংকের পাশের বধ্যভূমিতে হত্যা করে। সব মিলিয়ে কাগমারির ১২ জন ঘাতকদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে কাগমারীর শহীদ ১২ জনের স্মরণে স্বাধীনতার পর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। সেখানে চার নম্বরে বলহরি দাশের নাম রয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবেদনা জানিয়ে বলহরি দাশের স্ত্রী দুলী রানী দাশকে চিঠি ও দুই হাজার টাকা অনুদান পাঠিয়েছিলেন। দুলী রানী জীবিত আছেন। তাঁর এক মেয়ে ও পাঁচ ছেলে। বাবা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি বলে তাঁদের মনোবেদনা রয়েছে।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজনীতির দাবার খেলা / নিয়োগকর্তারা সব চলে গেলেন, কিন্তু নিয়োগ বহাল থাকল

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১১

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১২

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১৩

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৪

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৫

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৬

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৭

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৮

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৯

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

২০