ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

ইসলাম উদ্দিন

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
ইসলাম উদ্দিন

এলাকায় যাত্রাপালা ও খেলাধুলার উদ্যমী আয়োজক ছিলেন ইসলাম উদ্দিন। নিজেও ছিলেন একজন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় ও অভিনেতা। যাত্রাপালায় অভিনয় করে এলাকায় সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও প্রতিভার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ পাননি তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাসহ তথ্য আদান-প্রদানের কাজে অংশ নেওয়ায় একাত্তরের ১৫ নভেম্বর তাঁকে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।

ইসলাম উদ্দিনের জন্ম নেত্রকোনা সদর উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের কামালগাতি গ্রামে ১৯৪৮ সালে। বাবা হাফিজ উদ্দিন ছিলেন কৃষক, মা জুলেখা আক্তার গৃহিণী। তাঁরা বেঁচে নেই। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ইসলাম উদ্দিন দ্বিতীয়। অন্য ভাইদের মধ্যে সবার বড় মোহাম্মদ মোস্তফা মারা গেছেন। সবার ছোট মুজিবুর রহমান প্রায় দুই যুগ আগে ভারতের আজমির শরিফের মাজারের উদ্দেশে রওনা হয়ে আর ফিরে আসেননি। অপর ভাই জুলহাস মিয়া কৃষিজীবী। বোন নাছিমা আক্তার, সুরমা আক্তার ও কাজল আক্তার গৃহিণী। ইসলাম উদ্দিন বিয়ে করেননি।

একাত্তরের ১৪ নভেম্বর দুপুরে ইসলাম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান মুক্তার নেতৃত্বে তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সদর উপজেলার বিরামপুর বাজারে গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। খবর পেয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একদল রাজাকার-আলবদর তাঁদের আটক করে পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের হাতে তুলে দেয়। ঘাতক সেনারা ১৫ নভেম্বর ভোররাতে মোক্তারপাড়া সেতুসংলগ্ন বধ্যভূমিতে নিয়ে ইসলাম উদ্দিনসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করে। লাশ ভাসিয়ে দেয় মগড়া নদীতে। স্বজনেরা আর লাশের সন্ধান পাননি।

লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খালেক আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ইসলাম উদ্দিন ভালো খেলোয়াড় ও জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। রাজাকাররা প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার প্রতিভাবান এই মানুষটিকে বাঁচতে দেয়নি।

মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের মুজিব বাহিনীর উপ-আঞ্চলিক অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রাবন্ধিক হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, ইসলাম উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাসহ তথ্য আদান-প্রদান করছিলেন। এলাকার চিহ্নিত রাজাকার-আলবদরের দল অন্যদের সঙ্গে তাঁকে ধরে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয়। হানাদার সেনারা তাঁদের হত্যা করে। ইসলাম উদ্দিন তাঁর প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাননি।

ইতিহাসবিদ আলী আহাম্মদ খান আইয়োবের নেত্রকোনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থে শহীদ ইসলাম উদ্দিনের জীবনী রয়েছে। মোক্তারপাড়া সেতুসংলগ্ন বধ্যভূমিতে যে স্থানে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে স্মৃতি-৭১ নামে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে শহীদ ইসলাম উদ্দিনের নাম রয়েছে। শহীদ ইসলাম উদ্দিনের ছোট ভাই জুলহাস মিয়া প্রথম আলোকে জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাবা হাফিজ উদ্দিনের কাছে সমবেদনা জানিয়ে একটি চিঠি এবং মহকুমা প্রশাসকের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন।

২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান মুক্তার ভাতিজা মো. আলী রেজা বাদী হয়ে নেত্রকোনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১-এ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মামলা করেছিলেন। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৬ সালে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে দুজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বান্দাইখাড়ায় শতাধিক নিরীহ মানুষকে ব্রাশফায়ারে হত্যা

OMR পদ্ধতিতে ডাকসুর নির্লজ্জ ডিজিটাল কারচুপি

১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: গণহত্যা, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও প্রতিরোধের অমর গাথা

১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: কসবায় মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমনে ২১ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত

১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: কসবায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ২০১ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত

১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ১৫ দিনের মধ্যে আনুগত্য প্রকাশের নির্দেশ প্রবাসী সরকারের

হাসনাবাদ গণহত্যা: লাকসামের অমানবিক অধ্যায়

পোমরা গণহত্যা: মুক্তিযুদ্ধের এক অমানবিক অধ্যায়

১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উন্নয়ন

১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: শেখ মুজিবুর রহমানই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতীক

১০

১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

১১

কৃষ্ণপুর-ধনঞ্জয় গণহত্যা (কুমিল্লা আদর্শ সদর)

১২

১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ভুটানের রাজার শরণার্থীশিবির পরিদর্শন, অপ্রত্যাশিত সমর্থন

১৩

শোভনা গণহত্যা (খুলনা)

১৪

উদয়পুর গণহত্যা (মোল্লাহাট, বাগেরহাট)

১৫

১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহস এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ

১৬

৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন

১৭

ঘোড়াইল গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা)

১৮

৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আন্তর্জাতিক চাপ এবং গেরিলা অভিযানের দিন

১৯

কাঁঠালতলা গণহত্যা (ফকিরহাট, বাগেরহাট)

২০