ঢাকা রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিক

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম
দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিক
দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিক

পরোপকারী, নির্ভীক স্বভাবের মানুষ ছিলেন শিক্ষক দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিক। এলাকার কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে তিনি বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে ও আর্থিকভাবে যথাসাধ্য সহায়তা করতেন। প্রগতিশীল চিন্তাধারার দেশপ্রেমিক দীনেশচন্দ্র রায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সরব ও সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আহার, আশ্রয়দান ও আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। স্থানীয় রাজাকাররা দীনেশ রায় ও তাঁর ছোট ছেলে অরুণ কুমার রায়কে পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের কাছে ধরিয়ে দেয়। ঘাতক সেনারা এই পিতা-পুত্রসহ ধামরাইয়ের ১৪ জন নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

দীনেশচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৯০৬ সালে ঢাকার ধামরাই উপজেলার পশ্চিম কায়েতপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা শ্রীশচন্দ্র রায় মৌলিক বিপুল ভূসম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। মা কাদম্বিনী রায় মৌলিক গৃহিণী। তিন ছেলের মধ্যে দীনেশচন্দ্র বড়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ঢাকা বারের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। তবে আইন পেশা তাঁর ভালো লাগেনি, বেছে নেন শিক্ষকতা। শহীদ হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন ধামরাইয়ে হার্ডিঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি এলাকায় সাংস্কৃতিক চর্চা ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাঁর।

ধামরাইয়ের কায়েতপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের তুলনামূলক বিত্তবানদের বসবাস ছিল। তাঁদের অর্থসম্পদের প্রতি লোভ ছিল রাজাকারদের। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় রথযাত্রা হতো ধামরাইয়ে। এ কারণে ধামরাইয়ের প্রতি হানাদার সেনাদেরও নজর ছিল। একাত্তরের এপ্রিলের শুরুতে ধামরাইয়ের রথে অগ্নিসংযোগ করে হানাদার সেনারা। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় তারা।

রাজাকারদের নিয়ে হানাদার সেনারা ৯ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে দুটি সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে কায়েতপাড়ায় আরেক দফা হামলা চালায়। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় দীনেশচন্দ্র রায় নিজেই সেদিন রান্না করছিলেন। এমন সময় ঘাতক সেনারা তাঁর বাড়িতে হামলা করে। তারা দীনেশচন্দ্র ও তাঁর ছোট ছেলে অরুণ কুমারকে পিছমোড়া করে বেঁধে গাড়িতে তোলে। সেদিন ঘাতক সেনার দল বিভিন্ন বাড়ি থেকে আরও ১৮ জনকে তুলে নেয়।

থানায় নির্যাতনের পর দীনেশচন্দ্র, তাঁর ছেলেসহ ১৯ জনকে কালামপুর বাজারের পাশে বংশী নদীর পাড়ে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। বাবা-ছেলেসহ ১৪ জন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। সৌভাগ্যক্রমে পাঁচজন বেঁচে যান। একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বাংলা একাডেমির রশীদ হায়দার সম্পাদিত স্মৃতি: ১৯৭১-এর পুনর্বিন্যাসকৃত দ্বিতীয় খণ্ডে দীনেশচন্দ্র রায়ের ছেলে দেবেশ রায় মৌলিকের বাবাকে নিয়ে একটি স্মৃতিচারণা রয়েছে। এ ছাড়া বাশার খান ও জাহিদ হাসান খান সম্পাদিত আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত ঢাকা ১৯৭১: ধামরাই গণহত্যা বইয়েও এই গণহত্যা ও দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিকের জীবনী রয়েছে।

দীনেশচন্দ্র রায়ের স্ত্রী ইন্দু রেখা রায় ও তাঁদের তিন ছেলের কেউ বেঁচে নেই। দীনেশ রায়ের নাতি দেবাশীষ রায় মৌলিক জানান, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান দিয়েছিলেন। তাঁর দাদার নামে ধামরাই উপজেলা পরিষদের একটি ভবনের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দীনেশ ভবন। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হয়। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সরকারি গেজেটে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানুষ কার কাছে আশ্রয় চাইবে

আজহারুল ইসলামের রায়: বিচারের মানদণ্ড নাকি ন্যায়বিচারের প্রশ্ন?

অভয়নগরের ভয়, আমাদের পিছু ছাড়ছে না

চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি ইজারাদারি: আয় প্রবৃদ্ধির বাস্তবতা বনাম হুমকি

৩১ মে ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিকাল

দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতির সংকট ও ‘থ্রি এম’ সমাধান

২৯ মে, ১৯৭১: বরগুনার গণহত্যা, আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা

‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’

২৮ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিন

বাগবাটি গণহত্যা: সিরাজগঞ্জের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস

১০

২৭ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় দিন

১১

গণ-অভ্যুত্থানগুলোর পরিণতি হতাশাজনক

১২

জনগণ আসলে কী চায়

১৩

শহীদ বুদ্ধিজীবী / সুধীর চন্দ্র মজুমদার

১৪

শহীদ বুদ্ধিজীবী / মহসিন আলী

১৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী / আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ

১৬

শহীদ বুদ্ধিজীবী / ফাদার লুকাশ মারান্ডি

১৭

বুরুঙ্গা গণহত্যা: ৯৪ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা

১৮

২৬ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল দিন

১৯

২৫ মে ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী

২০