ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরতে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ পিএম
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কয়েকজন সদস্য ২১ সেপ্টেম্বর (১৯৭১) মুজিবনগর থেকে কলকাতা ও দিল্লি হয়ে নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এদিন যাঁরা যাত্রা করেন, তাঁরা হলেন (ছবিতে বাঁ থেকে) সৈয়দ আবদুস সুলতান, ফণীভূষণ মজুমদার, আবুল ফতেহ, মফিজ চৌধুরী, খুররম খান পন্নী, আসহাব-উল হক ও ফকির সাহাবুদ্দীন। ছবি: আনন্দবাজার পত্রিকার (ভারত) সৌজন্যে

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২১ সেপ্টেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঘটনাবহুল দিন। এই দিনে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ৫ জন প্রতিনিধি ইতিমধ্যে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য নিউইয়র্কে পৌঁছে যান। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বাকি ১১ জন প্রতিনিধি এই দিনে নিউইয়র্কের উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করেন। এই দলের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের বিশেষ দূত এবং লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ সীমান্তে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব, গণহত্যা, নিপীড়ন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধ করার দাবি এবং বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন। এই দিনে যাত্রা করা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ আবদুস সুলতান, ফণীভূষণ মজুমদার, মফিজ চৌধুরী, আসহাব-উল হক, ফকির সাহাবুদ্দীন, খুররম খান পন্নী ও আবুল ফতেহ। কয়েকজন সদস্য আগেই নিউইয়র্কে পৌঁছান। এই প্রতিনিধিদল মুজিবনগর থেকে কলকাতা ও দিল্লি হয়ে নিউইয়র্ক যান এবং সেখানে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রচারণা চালাবেন।

ঢাকায় এদিন

২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন পূর্বঘোষিত সময়সূচি বাতিল করে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের শূন্য আসনে উপনির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে। পুনর্বিন্যাসিত সময়সূচি অনুসারে ভোটগ্রহণ ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বর শেষ হবে। নির্বাচিত আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ সদস্যের সদস্যপদ বাতিল করে এই উপনির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম এক বিবৃতিতে বলেন, শরণার্থীদের নিয়ে ভারতের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা যাতে দেশে ফিরে আসতে পারে, তার জন্য ভারতকে বাধ্য করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন।

ভারতে এদিন

২১ সেপ্টেম্বর হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় 'বিশ্বের প্রতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে নিয়ে করা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পক্ষ থেকে বিশ্বের সব দেশের সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে এবং পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার প্রতি সব ধরনের সামরিক সাহায্য বন্ধ করতে। এই সম্মেলনের এক প্রস্তাবে ঘোষণা করা হয় যে, বাংলাদেশের মানুষের এই রাজনৈতিক আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি জাতির মুক্তির আন্দোলন হিসেবে দেখতে হবে। বিশ্বের সকল সরকার ও জনগণের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশকে তাৎক্ষণিক এবং কার্যকরী সহায়তা প্রদানের জন্য। উক্ত প্রস্তাবে বর্ণিত এই সাহায্য কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তির জন্য সামরিক সাহায্য হতে পারে, আবার কারও জন্য অর্থনৈতিক এবং অহিংস সাহায্য হতে পারে। দিল্লিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ এই দিনে লন্ডনে সদর দপ্তর করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মৈত্রী কমিটি গঠনের কথা বলেন। এই কমিটি গঠন এবং তার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষমতা সম্মেলনের সভাপতি সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণকে দেওয়া হয়।

২১ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'বাংলার বাণী' পত্রিকায় 'বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় কী দেখিলাম' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অতি সম্প্রতি 'বাংলার বাণী'-র একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করে ফিরে এসেছেন। সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধি যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তারই শেষ অংশ এখানে ছাপা হয়েছে। অধিকৃত এলাকায় পাকসেনারা যথেচ্ছভাবে স্থানীয় অবাঙালী কুলি-কামিন এবং চোর-ডাকাত, গুন্ডা-বদমায়েশদের নিয়ে বদর, রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনী গঠন করছে। তাদের সঙ্গে কিছু মুসলিম লীগ ও জামায়াতের গুন্ডা-পান্ডাও যুক্ত হয়েছে। তারা পাকবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় যে ঘৃণ্য কেলেঙ্কারির ইতিহাস সৃষ্টি করছে তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।

২১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা ও হাউজ অব কমন্সের এমপি ফ্রেড ইভান্স বলেন, শরণার্থীরা কোনো অবস্থা থেকে পালিয়ে এসেছেন তা কল্পনারও অতীত। তবে আমরা আশা করছি ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেবে। কারণ এরই মধ্যে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ সরকার যেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করে এজন্য আমরা এরই মধ্যে হাউজ অব কমন্সের ২২০ জন এমপির স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পেরেছি। আশা করছি তা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে। ব্রিটেনে সাংসদদের মোট সংখ্যা ৬৩০। তিনি বাংলাদেশ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে গিয়ে শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর দেশের মানুষ বাংলাদেশকে মুক্ত করার ব্যাপারে একমত। ব্রিটেনের গণমাধ্যম এ ব্যাপারে সোচ্চার। সারা বিশ্বেই বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে।

পাকিস্তানে এদিন

২১ সেপ্টেম্বর লাহোরে এক সমাবেশে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নুরুল আমিন বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি ভালোর দিকেই যাচ্ছে মনে হয় এবং আশার আলো দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের দুই অংশকে এক রাখা কেবল গণতন্ত্রের মাধ্যমেই সম্ভব, তা সামরিক সরকারের জন্য কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই দিনে করাচি বিমানবন্দরে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রার আগে নুরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতা সম্পর্কে নতুন আস্থা নিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি।

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৭৪টি জোটনিরপেক্ষ দেশের সরকারের প্রতিনিধিদল একটি খসড়া ইশতেহার তৈরি করে। এতে শরণার্থী সমস্যাকে মানবিক সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বলা হয়, বাস্তুচ্যুত শরণার্থীরা যেন নিরাপদভাবে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে তার জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এটি তুলে ধরা হবে। এটিকে 'অভূতপূর্ব মানবিক সমস্যা' হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তাদের মনে আস্থা জাগাতে এবং তাদের দ্রুত নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ গড়ে তুলতে ইশতেহারে আহ্বান জানানো হয়। জাম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত খসড়া তৈরির অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি ব্যাপকতর রাজনৈতিক পরিসরে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মরক্কোসহ কয়েকটি সদস্যদেশ আপত্তি জানিয়ে বলে, পাকিস্তানের অনুপস্থিতিতে এই আলোচনা যুক্তিযুক্ত নয়।

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

২১ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বল্লা গ্রামে রাজাকারদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনীর একটি দল লুটপাট করতে এলে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ২ জন হানাদার সৈন্য নিহত হয়। বাকিরা পালিয়ে ক্যাম্পে ফিরে যায়। পরে এই দিনে হানাদারদের বড় একটি দল গ্রামে প্রবেশ করে পৈশাচিক নির্যাতনের পর ১৬ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে।

২১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৩৩ বেলুচের 'বি' এবং 'ডি' কোম্পানি মেজর দুররানির নেতৃত্বে চাঁদলা থেকে নৌকায় করে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণের উদ্দেশ্যে মন্দভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় এ খবর পেয়ে সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা মন্দভাগ শালদা নদী এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় আরও দুটি দল গ্রামের ডান এবং বাম দিকে অবস্থান নেয়। এই দিনে রাত একটার সময় হানাদার সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যূহের কাছে পৌঁছলে ক্যাপ্টেন গাফফারের দল তাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৬ জন হানাদার সৈন্য নিহত ও অনেকে আহত হয়। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের দখলে নেয়। ২ নম্বর সেক্টরের শালদা নদী এলাকায় এই দিনে বড় যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল চাঁদলা থেকে নৌকায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণের লক্ষ্যে মন্দভাগের দিকে এগিয়ে আসে। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল শালদা নদীতে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি সেনারা কাছাকাছি এলে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। যুদ্ধে একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন হতাহত হয়।

২১ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মুক্তিবাহিনীর 'সি' কোম্পানির একটি প্লাটুন লেফটেন্যান্ট কাইয়ূম চৌধুরীর নেতৃত্বে রৌমারীর চর কোদালকাটিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই দিনে হানাদার বাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য মর্টারের সাহায্যে মুক্তিবাহিনীর চরকোদাল ঘাঁটি আক্রমণ করলে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা দুর্ধর্ষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী পিছু হটে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩৫ জন হানাদার সৈন্য নিহত হয়। ৬ নম্বর সেক্টরের রৌমারীর কোদালকাটিতে বড় একটি যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা মর্টারের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের চরকোদাল ক্যাম্প আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণকে ব্যর্থ করে দেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকজন হতাহত হয়।

২১ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকা ঘাঁটি থেকে প্রায় ৪০০ রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল ৪ ভাগে বিভক্ত হয়ে বড়াইদ এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এদিকে বড়াইদ গ্রামে আফসার ব্যাটালিয়নের কোম্পানির হেডকোয়ার্টার। হানাদারদের আসার খবর পেয়ে আফসার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন খান, প্লাটুন কমান্ডার সামছুদ্দিন, মনির উদ্দিন, মো. মোতালিব মাস্টার ও হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর ৪টি রাস্তা প্রতিরোধ করে। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা গুলিবিনিময়ের পর হানাদার বাহিনী ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ১৪ জন পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য নিহত হয়।

২১ সেপ্টেম্বর ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ২০০ গেরিলার একটি দল পালং থানায় অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। প্রায় ৪ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনীর সদস্যরা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ জন হানাদার সৈন্য, রাজাকার ও হানাদার পুলিশ নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনী পালং থানা নিজেদের দখলে নেয়। এই সেক্টরের গেরিলাদের আরেকটি বড় দল শরীয়তপুরের পালং থানায় অতর্কিতে হামলা করলে পাকিস্তান অনুগত কয়েকজন পুলিশ ও রাজাকার নিহত হয়। দু-তিনজন গেরিলা যোদ্ধাও আহত হন।

২১ সেপ্টেম্বর সিলেটের গোবিন্দগঞ্জ গ্রামে মুক্তিবাহিনীর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোবিন্দগঞ্জ গ্রামের চারপাশে ফাঁদ পাতে। এই দিনে সকালে ৩ জন হানাদার সেনাসহ রাজাকারদের একটি দল নৌকাযোগে ওই গ্রামে এসে একজন রাজাকার রেকি করতে গ্রামে প্রবেশ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকি সৈন্যরা নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

২১ সেপ্টেম্বর সিলেটের কুমারশৈল চাবাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন হানাদার সেনা নিহত হয়।

২১ সেপ্টেম্বর বরগুনার পাথরঘাটায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই হামলায় ৫ জন হানাদার সেনা নিহত হয় এবং ৩ জন আহত হয়। ৯ নম্বর সেক্টরের একদল মুক্তিযোদ্ধা পাথরঘাটা অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করলে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।

সূত্র:

- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ষষ্ঠ, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড

- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর দুই, ছয় ও নয়

- দৈনিক বাংলার বাণী, ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

- হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

- দৈনিক পাকিস্তান, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

- দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

- পূর্বদেশ, ঢাকা, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

- আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, কলকাতা, ভারত, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১২

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৩

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৪

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

১৫

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভিয়েতনামের সমর্থন

১৬

মামুদপুর গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

১৭

ত্রিমোহনী গণহত্যা ও বধ্যভূমি, নেত্রকোনা

১৮

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক

১৯

চিংড়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

২০