ঢাকা রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

বিদেশি শাসন নয়, এখন শাসন চলছে বিদেশিদের

সম্মোহোন ঋক
১১ মে ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম
১২ মে ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম
বিদেশি শাসন নয়, এখন শাসন চলছে বিদেশিদের

বাংলাদেশের সংবিধান, নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামোতে ক্রমবর্ধমানভাবে বিদেশি নাগরিকত্বধারী ব্যক্তিদের প্রভাব বাড়ছে। উচ্চপদস্থ সরকারি পদে নিযুক্ত অনেকেই মার্কিন, ব্রিটিশ, কানাডিয়ান বা ইউরোপীয় নাগরিকত্বধারী—যারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দেশগুলোর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়েছেন। এই প্রবণতা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি বড় হুমকি তৈরি করছে।

এই প্রতিবেদনে আমরা এমন ব্যক্তিদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও তাদের নিয়োগের প্রভাব বিশ্লেষণ করব।

বিদেশি নাগরিকত্বধারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের তালিকা

ড. ইউনুস (মোহাম্মদ ইউনুস) – প্রধান উপদেষ্টা, আমেরিকান নাগরিক।

খলিলুর রহমান – জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আমেরিকান নাগরিক।

মনির হায়দার – প্রধান উপদেষ্টার ঐক্যমত বিষয়ক বিশেষ সহকারী (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা), আমেরিকান নাগরিক।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান – পরিবেশ উপদেষ্টা, ব্রিটিশ নাগরিক।

লুতফে সিদ্দিক – প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত, সুইজারল্যান্ডের নাগরিক।

সুফিউর রহমান – প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা, সুইজারল্যান্ডের নাগরিক।

এম মুশফিকুল ফজল আনসারী – মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা), আমেরিকান নাগরিক।

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী – প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়), প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।

ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব – প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়), প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা, নেদারল্যান্ডসের নাগরিক।

শেখ মইনউদ্দিন – প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়), প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা, আমেরিকান নাগরিক।

ড. আলী রিয়াজ – সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান, ঐক্যমত কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান, আমেরিকান নাগরিক।

ড. বদিউল আলম মজুমদার – নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান, আমেরিকান নাগরিক।

কামাল আহমেদ – গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান, ব্রিটিশ নাগরিক।

ড. মোস্তাক হোসেন খান – দুদক সংস্কার কমিশনের সদস্য, ব্রিটিশ নাগরিক।

আশিক চৌধুরী – বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) এর প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ব্রিটিশ নাগরিক।

লামিয়া মোরশেদ – সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় ইউনুস সেন্টারের সহযোগী, কানাডার নাগরিক (সম্পূর্ণ পরিবারসহ)।

শাজিব এম খায়রুল ইসলাম – প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা), আমেরিকান নাগরিক।

বিদেশি নাগরিকত্বের শর্তাবলি ও এর প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা বা সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় একজন ব্যক্তিকে সেই দেশের সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ:

মার্কিন নাগরিকত্বের শপথ (US Oath of Allegiance)

"আমি hereby declare, on oath, that I absolutely and entirely renounce and abjure all allegiance and fidelity to any foreign prince, potentate, state, or sovereignty of whom or which I have heretofore been a subject or citizen..." (অনুবাদ: "আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছি যে, আমি আমার পূর্বের সকল রাষ্ট্রীয় আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা সম্পূর্ণ ও নিঃশর্তভাবে পরিত্যাগ করছি...")

একই ধরনের শপথ ব্রিটেন, কানাডা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন, তখন তিনি কীভাবে বাংলাদেশের স্বার্থে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন?

জাতীয় নিরাপত্তা, সংবিধান বা অর্থনীতির মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ কি সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি নয়?

ঔপনিবেশিক শাসনের সাথে তুলনা

ইতিহাসে দেখা গেছে, ঔপনিবেশিক শাসকরা স্থানীয় প্রশাসনে তাদের অনুগত একটি শ্রেণি তৈরি করতেন, যারা বাহ্যিকভাবে স্থানীয় কিন্তু নীতিনির্ধারণে বিদেশি শক্তির স্বার্থ রক্ষা করতেন। আজকে বাংলাদেশে কি একই প্যাটার্ন চলছে?

উদাহরণ- ড. ইউনুস (আমেরিকান নাগরিক) – যিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিতে গেটস ফাউন্ডেশন ও বিশ্বব্যাংকের প্রভাব বিস্তারে সরাসরি জড়িত।

ড. আলী রিয়াজ (আমেরিকান নাগরিক) – যিনি সংবিধান সংস্কারের মতো মৌলিক বিষয়ে কাজ করছেন, অথচ তার আনুগত্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি।

জনগণের করণীয়

১. সচেতনতা বৃদ্ধি: এই বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনা জোরদার করতে হবে।

২. জবাবদিহিতা দাবি করা: রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে বিদেশি নাগরিকত্বধারী ব্যক্তিদের নিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. আইনি সংস্কার: সংবিধানে সংশোধনী এনে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে হবে।

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকত্বধারী ব্যক্তিদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব একটি গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে বিদেশি শক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হতে পারে।

"স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ, যখন তা স্বাধীন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রক্ষিত হয়।"

সূত্র

মার্কিন নাগরিকত্ব শপথ (USCIS)

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব আইন

বাংলাদেশ সরকারি গেজেট ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কোদালিয়া গণহত্যা / নগরকান্দার রক্তঝরা ইতিহাস

১ জুন ১৯৭১: নগরকান্দা গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি

মানুষ কার কাছে আশ্রয় চাইবে

আজহারুল ইসলামের রায়: বিচারের মানদণ্ড নাকি ন্যায়বিচারের প্রশ্ন?

অভয়নগরের ভয়, আমাদের পিছু ছাড়ছে না

চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি ইজারাদারি: আয় প্রবৃদ্ধির বাস্তবতা বনাম হুমকি

৩১ মে ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিকাল

দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতির সংকট ও ‘থ্রি এম’ সমাধান

২৯ মে, ১৯৭১: বরগুনার গণহত্যা, আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা

‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’

১০

২৮ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিন

১১

বাগবাটি গণহত্যা: সিরাজগঞ্জের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস

১২

২৭ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় দিন

১৩

গণ-অভ্যুত্থানগুলোর পরিণতি হতাশাজনক

১৪

জনগণ আসলে কী চায়

১৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী / সুধীর চন্দ্র মজুমদার

১৬

শহীদ বুদ্ধিজীবী / মহসিন আলী

১৭

শহীদ বুদ্ধিজীবী / আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ

১৮

শহীদ বুদ্ধিজীবী / ফাদার লুকাশ মারান্ডি

১৯

বুরুঙ্গা গণহত্যা: ৯৪ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা

২০