মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও নানা ঘটনাপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানে তুলে ধরা হলো একাত্তরের এই দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও শরণার্থী সংকট
ভারত সফররত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিনিধিদলের সদস্য টমাস জামিসন ১৭ মে দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সহায়তায় ভারত সরকার ছয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। ভারতের আশা, এই সময়ের মধ্যে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।
জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রঘুনাথ কেশব খাদিলকর অংশ নেন। তিনি ছয় মাসের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করলেও এর পেছনের যুক্তি ব্যাখ্যা করেননি। ভারতের হিসাবে, ৩০ লাখ শরণার্থীর জন্য ছয় মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন জোর দিয়ে বলেন, শরণার্থী সমস্যা কেবল ভারত বা পাকিস্তানের নয়—এটি একটি বৈশ্বিক ইস্যু। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়।
পশ্চিমবঙ্গের ত্রাণ প্রচেষ্টা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার শরণার্থী ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে জরুরি বৈঠক করে। মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় জানান, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনায় শরণার্থীদের অন্য রাজ্যে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা উঠেছে। রাজ্যের তিন মন্ত্রী ২০ মে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রের কাছে জরুরি সহায়তা চাইবেন।
আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি
নরওয়ে: রেডক্রসের প্রতিনিধি ফারে ওটারসন কলকাতায় জানান, আহত শরণার্থীদের চিকিৎসায় নরওয়েজিয় মেডিকেল টিম শিগগিরই পশ্চিমবঙ্গে আসবে।
কানাডা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিচেল শার্প সংসদে জানান, শরণার্থীদের সহায়তায় কানাডা প্রস্তুত।
পূর্ব জার্মানি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী অটো উইনজার ভারতীয় হাইকমিশনারকে মানবিক সাহায্যের আশ্বাস দেন।
পাকিস্তানের প্রচারণা ও দমননীতি
ইয়াহিয়া খানের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জাতিসংঘে বাংলাদেশ সংকটে পাকিস্তানের বক্তব্য তুলে ধরে ২০ লাখ টন খাদ্য ও নৌযান সহায়তা চান।
অন্যদিকে, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ জনগণকে “অনুপ্রবেশকারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা” করার নির্দেশ দেয়। গভর্নর টিক্কা খান উপসামরিক কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেন, যা উচ্চ আদালতের চ্যালেঞ্জের ঊর্ধ্বে।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা ওমরাহ খান ঢাকায় ঘোষণা দেন, “দেশে এখন দুই দল—পাকিস্তানপন্থী ও পাকিস্তানবিরোধী।” তিনি সেনাবাহিনীকে সহায়তার আহ্বান জানান।
সূত্র: পূর্বদেশ, ১৮ মে ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা (কলকাতা), ১৮ ও ১৯ মে ১৯৭১।
মন্তব্য করুন