ad

যাত্রা শুরুর পরপরই অভ্যন্তরীণ সংকটে এনসিপি

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টি
জাতীয় নাগরিক পার্টি

২০২৪ সালে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন জুলাই অভ্যুত্থানের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই বড় অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখোমুখি।

বাহ্যিক কারণে নয়, বরং নিজেদের নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য সামনে আসায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দলটির মধ্যে। প্রকাশ্যে এসেছে এনসিপির শীর্ষ স্তরের ফাটল। প্রশ্ন উঠেছে দলটির সাংগঠনিক ঐক্য এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতা নিয়ে।

২১ মার্চ এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে 'রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে ফেরাতে' ক্যান্টনমেন্টের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ তোলার পর থেকেই এই অস্থিরতার শুরু।

তিনি অভিযোগ করেন, ১১ মার্চ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে এক বৈঠকে আসন সমঝোতা ও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

হাসনাতের পোস্টে মানুষের মধ্যে বিতর্ক এবং রাজনৈতিক মন্তব্যের ঝড় তুলে দেয়। নতুন মুখের অধীনে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করছেএই দাবি বেসামরিক রাজনীতিতে সামরিক সম্পৃক্ততা নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

তবে পরদিন হাসনাত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমাদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে, যারা সেনাবাহিনীকে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। সেনাবাহিনীর প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা আছে, তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে 'ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ' মেনে নেওয়া হবে না।

এনসিপির অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন প্রধান সংগঠক (উত্তর) সরজিস আলম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে হাসনাতের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।

বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও সরজিস আংশিকভাবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, নিজের জায়গা থেকে তিনি সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে সরাসরি 'প্রস্তাব' দেয়ার আঙ্গিকে দেখেন না, বরং 'সরাসরি অভিমত প্রকাশের' মতো করে দেখেন।

তিনি হাসনাতের পোস্টের সমালোচনা করে বলেন, বৈঠকের কথাগুলো যেভাবে 'ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে, এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি'।

এসব আলোচনার মাঝে দলটির সিনিয়র যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ সারজিসের ফেসবুকে পোস্টের নিচে মন্তব্য করেছেন, হাসনাত অথবা সারজিসের মধ্যে যেকোনো একজন মিথ্যা বলছেন।

হান্নান মাসুদ লিখেছেন, 'এসব কি ভাই!! পাবলিকলিই বলছিদুইজনের একজন মিথ্যে বলছেন। এটা চলতে পারে না। আর দলের গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট হোল্ড করেও আপনারা যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে বিচরণ করছেন, এবং তা পাবলিক করে এনসিপিকেই বিতর্কিত করছেন।'

দলীয় স্তর থেকে আরও অসম্মতি আসে। শনিবার ফেসবুকে হাসনাতের স্ট্যাটাস প্রদানকে 'শিষ্টাচারবর্জিত' বলে মিডিয়াতে মন্তব্য করেন দলের মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, সেনাবাহিনী এবং হাসনাত ও সারজিসের মধ্যে বৈঠকের কথা পরে জানতে পারে এনসিপি। বৈঠকটি এনসিপির পক্ষ থেকে হয়নি। তবে পাটোয়ারী বলেন, এতে এনসিপির মধ্যে কোনো বিভেদ বা বিভাজন তৈরি হয়নি।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম হাসনাতের সরাসরি সমালোচনা করা থেকে বিরত থেকেছেন। যেকোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়দলের এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। তার এই অবস্থান হাসনাতের মূল উদ্বেগকেই সূক্ষ্মভাবে সমর্থন দেয়।

উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। তিনি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, কোনোভাবেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জনগণকে দাঁড় করানো যাবে না।

এনসিপিতে ক্ষোভ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির একাধিক নেতা বলেন, শীর্ষ নেতাদের এমন আচরণ সবাইকে হতাশ করেছে। একজন নেতা বলেন, 'তারা সবাই গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, কিন্তু দলীয় গঠনতন্ত্র ও কোড অভ কন্ডাক্ট না থাকায় এগুলো পরিহার করা সম্ভব হয়নি।'

একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এনসিপি নেতা খালিদ সাইফুলাহ লিখেছেন, 'গুটিকয়েক ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত চিন্তাপ্রসূত কথাবার্তা কোনো ধরনের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই বাইরে প্রকাশ করছেন। ব্যক্তিগত রাজনীতি হাসিলের জন্য তারা যখন যা ইচ্ছা বলে বেড়াচ্ছেন, সেগুলো যে স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। যদি সেলিব্রেটি ফেইস, কন্ট্রোভার্সি আর পপুলিজম দিয়েই রাজনীতি করতে চান, তাহলে আমাদের পার্টি থেকে বাদ দিয়ে টিকটকারদের এনে বসিয়ে দিন।'

তবে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা শারমিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অনলাইনে এ ধরনের মতবিরোধ সত্ত্বেও তাদের স্পিরিটে কোনো ঘাটতি নেই, বিভেদ নেই। ঈদের পরেই আমরা গঠনতন্ত্র ও কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি শেষ করব।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিরা’র ঈদ সংগ্রহ / ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে এক অনন্য উদযাপন

২৭ এপ্রিল ১৯৭১: বিশ্বজুড়ে গণহত্যার নিন্দা

ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা

বাম রাজনীতির দ্বিধা: আদর্শের সংকট ও ডানপন্থার সাথে সহাবস্থান

ন্যানো-বালাইনাশক: ফসল ও পরিবেশ সুরক্ষায় নব-বিপ্লব

পটুয়াখালী গণহত্যা দিবস আজ

কাশ্মিরে দুপক্ষের মধ্যে আবারও গোলাগুলি

সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো

পেহেলগামে হামলা : আসামে একদিনে গ্রেপ্তার ৯

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা: ইতিহাস ও ধর্মের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ

১০

ভারত-পাকিস্তান নিজেরাই চলমান সংকট সমাধান করবে: ট্রাম্প

১১

ওমানে আজ তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

১২

ভারতের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে পাকিস্তানের সব দল

১৩

রাবির ‘এ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন বোরহান ও সাদিয়া

১৪

ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি এখন জাপানের চেয়েও বড়

১৫

প্রতিবাদের মুখে চলচ্চিত্রে অনুদানের নতুন নিয়ম স্থগিত

১৬

পুরুষের জন্য এল নতুন জন্মনিরোধক, একবার ব্যবহারে নিশ্চিন্ত দুই বছর

১৭

পাকিস্তানি অভিনেতার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না ভারতে

১৮

১৯৮৫ সালের মামলায় ইয়ামি গৌতম

১৯

জীবনানন্দ দাশ বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

২০