মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে দেশ-বিদেশের বহু মানুষের একক ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং নানা ঘটনা ছিল। এখানে একাত্তরের প্রতিটি দিনের বিবরণ তুলে ধরা হলো।
ব্রিটেনে গণহত্যার নিন্দা
যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য জন স্টোনহাউস ২৭ এপ্রিল বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "ঢাকায় ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী যা করেছে, তা নিঃসন্দেহে গণহত্যা। ৯৮ শতাংশ ভোটারের গণতান্ত্রিক রায়কে সামরিক জান্তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তা ভেস্তে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এ বিষয়ে সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও নিষ্ক্রিয় থাকা উচিত নয়।"
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর আহ্বান
সুইডেনের বিজ্ঞানী, লেখক ও রাজনীতিকেরা স্টকহোমে বৈঠক করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা জাতিসংঘে উত্থাপনের আহ্বান জানান।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম পাকিস্তানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, "ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না বা তাদের ভূমি দখল করতে চায় না। তবে ভারতের ওপর যদি কোনো রাষ্ট্র যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তবে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।"
ভারতের সমাজবাদী দলের নেতা এস এম যোশী বলেন, "বিভিন্ন রাষ্ট্র যাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, সে জন্য ভারতের উদ্যোগী হওয়া উচিত। ভারতের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের সাহায্য করা জরুরি।"
নেপালে সমর্থন
বাংলাদেশের সমর্থনে নেপালের ছাত্ররা মিছিল করে সরকারের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। নেপাল ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিসের জাতীয় কমিটি বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানায়।
মহালছড়িতে শহীদ বীর উত্তম আফতাবুল কাদের
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখসমরে মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের শহীদ হন। রামগড়ে ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের (পরে বীর উত্তম, মেজর, সাংসদ ও মন্ত্রী) সঙ্গে যোগ দিয়ে তিনি মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দেন। মহালছড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের প্রবল আক্রমণ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটার পথ তৈরি করতে গিয়ে আফতাবুল কাদের শহীদ হন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর বীর উত্তম উপাধিতে সম্মানিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালি কূটনীতিকের আনুগত্য
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নিযুক্ত পাকিস্তানের ভাইস কনসাল এ এইচ মাহমুদ আলী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কাছে তারবার্তা পাঠান। পাকিস্তান তাকে বদলি করলে তিনি পদত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চান এবং বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানের তৎপরতা
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানায়, ২৬ এপ্রিল থেকে কলকাতায় পাকিস্তান মিশন ও ঢাকায় ভারতীয় মিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান বেসামরিক বাহিনী (ইপিসিএফ) রাখা হয়েছে।
বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ
লন্ডনের ডেইলি মিরর পত্রিকার প্রথম পাতায় উড্রো ওয়াট বাংলাদেশের ঘটনায় যুক্তরাজ্যের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া ওয়াশিংটন ডেইলি নিউজ, কানাডার মন্ট্রিয়ল স্টার, ব্রাজিলের ও প্লোবো এবং মালয়েশিয়ার সারওয়াক ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক; দৈনিক পাকিস্তান, ২৮ এপ্রিল ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ২৮ এপ্রিল ১৯৭১
মন্তব্য করুন