দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর আঁখিরা গণহত্যা দিবস আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল)। ১৯৭১ সালের এই দিনে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাইহাট থেকে প্রায় ২০০ গজ দক্ষিণে আঁখিরা পুকুরপাড়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় দেড় শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশুকে। তারা ভারতে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল।
পার্বতীপুর উপজেলার (বর্তমানে ফুলবাড়ী) রামচন্দ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকারের চক্রান্তে ঘটে এই গণহত্যা। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, ফুলবাড়ী, নবাবগঞ্জ, পার্বতীপুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫০টি পরিবারের সদস্যদের ভারতে পৌঁছে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেন তিনি। নিরাপদে সীমান্ত পার করে দেওয়ার নাম করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা-পয়সা ও সোনা-গয়না। পরে তাদের তুলে দেন ফুলবাড়ীতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের হাতে।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে সবার হাত পিছনে বেঁধে আঁখিরা পুকুরপাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।
ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এছার উদ্দিন ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অম্বরিশ রায় চৌধুরী বলেন, “ফুলবাড়ীর যেসব বধ্যভূমি আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে বারাই বধ্যভূমি। আর রাজাকারদের মধ্যে কেনান সরকার ছিল সবচেয়ে কুখ্যাত। সে শুধু ওই ৫০টি পরিবারের মানুষকেই হত্যা করেনি, বরং ফুলবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কয়েক হাজার নিরীহ মানুষকেও হত্যা করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তার মৃত্যু হয়।”
তিনি আরও জানান, আঁখিরা বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। পাশাপাশি তিনি এই গণহত্যা দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানান।
আঁখিরা এলাকার ইউপি সদস্য ফয়জার রহমান, বাবলু রায়, নন্দ ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “দীর্ঘ ৫৪ বছর পর এই বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। আমরা চাই, এই গণহত্যা দিবসটি সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাক এবং জাতীয়ভাবে পালিত হোক।”
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসাহাক আলী বলেন, “রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালনের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে নির্দেশনা এলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
মন্তব্য করুন