সপ্তাহের ব্যবধানে আরও অস্থির হয়ে উঠেছে সবজির বাজার। গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে রাজশাহীর বাজারে কেজি প্রতি দাম ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজশাহীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বাজারের এই অস্থির পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি সরবরাহ। এতে শাক-সবজি কম আসায় দাম বাড়ছে।
রাজশাহী বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি করলা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে করলা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা। বরবটি ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, লতি ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা ও টমেটো ১০ টাকা বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায়, গাজর ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায়, শসা ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, পটোল ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ২৫-৩০ টাকা, সজনে ডাটা ২০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা ও ধনেপাতা ১০ টাকা বেড়ে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউ ৩০ টাকা বেড়ে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে যা কেনাবেচা হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়।
রাজশাহীর সাহেব বাজারের সবজি বিক্রেতা নাজির আলী বলেন, সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে সবজির। সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো সবজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্তও বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।
ক্রেতারা বলছেন, রমজানে সবজির দাম কম থাকলেও, ঈদের পর থেকেই শাক-সবজির বাজার চড়া। দাম কমাতে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। না হলে ফের অস্থির হয়ে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার।
তবে রমজানজুড়ে ভোগানো লেবুর ডজন নেমে এসেছে ২০-৩০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, রমজানে যেখানে লেবুর হালি বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকায়, সেখানে এখন দাম কমে ডজনই বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। লেবু বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে নতুন লেবু আসছে। এতে দাম কমছে। মান ও আকার ভেদে প্রতিপিস লেবু বিক্রি হচ্ছে ১-৪ টাকায়। বৃষ্টি বাড়লে লেবুর উৎপাদন বাড়বে। তখন দাম আরও কমবে।
এদিকে পহেলা বৈশাখ থেকে চড়া হয়েছে পেঁয়াজের বাজার। গত সপ্তাহে যেখানে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, সেখানে আজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সিয়াম বলেন, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। কেন বেড়েছে বুঝতেছি না। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।
রাজশাহী মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি ফাইজুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে সবজি ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকার কারণেই এটি বেড়েছে। দ্রুত সরবরাহ বাড়বে বলে আশা করছি। সরবরাহ বাড়লে এগুলো কমে যাবে।
এদিকে অস্থিরতা কমেনি চালের বাজারেও। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮৬-৯০ টাকা, আটাশ ৬০-৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
এদিকে দাম বাড়ানোর পর বাজারে সরবরাহ বেড়েছে ভোজ্যতেলের। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা ও পাম তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য গুনতে হচ্ছে ৯২২ টাকা।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আলুর দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর জন্য গুনতে হচ্ছে ২০-২২ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিকেজি আমদানি করা রসুনের জন্য ১৮০ থেকে ২১০ ও দেশি রসুনে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৭০ টাকায়।
এছাড়া দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।
মুরগির দাম কমলেও বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
এদিকে বাজারে কিছুটা বেড়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা ও শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২৫০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
মন্তব্য করুন