বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সনজীদা খাতুন আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি ছিলেন একাধারে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী একটি শিশুশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দা-র সভাপতি।
সনজীদা খাতুনের পিতা ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী।
সনজীদা খাতুন ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
সনজীদা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শেষে অবসরে যান।
পুরস্কার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। এছাড়া কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর সাভারের জিরাব গ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তার সাথে কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মীও ছিলো। তারা ভারতের আগরতলা শহরে কিছুদিন অবস্থান করেন। তারপর ৫ মে, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতায় প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের একতাবদ্ধ করা শুরু করেন।
তিনি মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, অতীত দিনের স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান, ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা, জননী জন্মভূমি, রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ, শান্তিনিকেতনের দিনগুলি, জীবনবৃত্ত।
সূত্র
বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সম্পাদকঃ সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম, ২য় সংস্করণ, ২০০৩, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃ. ১১৫-১১৬
"সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৫।
রহমান, মতিউর (২০২৩-১১-০৭)। "সনজীদা খাতুন: সাংস্কৃতিক স্বাধিকার অর্জনে সামনে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৭।
"সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৯।
"সনজীদা খাতুন ও সাজ্জাদ আলী জহির পাচ্ছেন ভারতের 'পদ্মশ্রী'"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২৫ জানুয়ারি ২০২১। ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২১।
"দুই গুনী পেলেন ভারতের 'পদ্মশ্রী'"। চলতি ঘটনা। আব্দুল কাইয়ুম: ৩। ২০২২।
মন্তব্য করুন