মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে ছিল দেশ-বিদেশের বহু মানুষের অবদান এবং অসংখ্য ঘটনা। এখানে তুলে ধরা হলো ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি।
সীমান্তে পাকিস্তানের মর্টার হামলা ২৪ এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে বনগাঁয়ের কাছে মুক্তিবাহিনীর শিবিরে মর্টার হামলা চালায়। হামলার কিছু গোলা ভারতীয় এলাকাতেও পড়ে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা উল্লেখ করে, “পাকিস্তানি ফৌজ ভারতীয় সীমার পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পেট্রাপোল রেললাইনের কাছে অবস্থান নিয়ে বিকেল চারটা থেকে এক ঘণ্টা ভারতীয় গ্রামগুলোর ওপর গুলি চালায়।”
নয়াদিল্লি থেকে পাকিস্তানের এই আগ্রাসনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম হুঁশিয়ারি দেন, ভারতীয় এলাকায় পাকিস্তানি সামরিক অভিযান সহ্য করা হবে না। একই সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া নোট পাঠিয়ে পাকিস্তান হাইকমিশনকে সতর্ক করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সহায়তা মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন হরিশ মহীন্দ্র, সহ-সভাপতি ছিলেন ওয়াহিদা রহমান ও শর্মিলা ঠাকুর।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের শিক্ষকদের অন্তত ছয় মাসের জন্য পরিদর্শক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য ক্যাম্প স্থাপন এবং বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
অবরুদ্ধ বাংলাদেশে পাকিস্তানি দমন ঢাকায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, নিউমার্কেট ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সরকারের হ্যান্ডআউটে বলা হয়, “সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় মানুষের আস্থা বাড়ছে।”
ঢাকার মিরপুরে ২৫ সদস্যের একটি শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর ১৮টি ইউনিটের আহ্বায়কদের নাম ঘোষণা করা হয়।
যুদ্ধের ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ পূর্বাঞ্চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের করেরহাটে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের গতিরোধ করে। রাঙামাটি থেকে মহালছড়ির দিকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে কুতুবছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়।
মাদারীপুরে প্রবেশ করেই পাকিস্তানি সেনারা বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালায়।
ব্রিটিশ এমপির বক্তব্য ব্রিটেনের কমনস সভার সদস্য উড্রো ওয়াট কমনস সভায় বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে, তা জঘন্য। ব্রিটিশ সরকার কেন জাতিসংঘে এই নির্মমতার বিষয়টি উপস্থাপন করছে না?”
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র (ত্রয়োদশ খণ্ড), বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর এক ও সাত), দৈনিক পাকিস্তান, ২৫ এপ্রিল ১৯৭১, আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ২৫ এপ্রিল ১৯৭১
মন্তব্য করুন