ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

চালবাজিতে চাল, মানুষের অবস্থা বেহাল

চালবাজিতে চাল, মানুষের অবস্থা বেহাল

বাংলাদেশের খাদ্যভাণ্ডারে চালের অবস্থা রীতিমতো সংকটাপন্ন। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি চালের পেছনেই চলে যায়। অথচ, গত কয়েক বছরে চালের বাজারের যে অস্থিরতা আমরা লক্ষ্য করছি, তা শুধু হতাশার নয়, বরং মানুষের জীবনের সার্বিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমান রাজনীতির পটভূমিতে চালের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, খাদ্য নিরাপত্তা এখন একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে মিনিকেট চালের দাম ১৩ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ১৪ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সিন্ডিকেট, অপ্রতুল সরবরাহ, এবং বাজার তদারকির অভাব। ২০০১ সাল থেকে শুরু হওয়া বাজার সিন্ডিকেট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা এখনো টিকে আছে। বিগত সরকারগুলোও এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে জনগণের জন্য খাদ্যসমগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি কেবল বৃদ্ধি পায়নি, বরং এটি নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আবারো অভিযোগ উঠেছে। বাজারে পর্যাপ্ত চাল থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটবাজি ও মজুতদারির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি, যে তারা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, তার মৌলিক বাস্তবায়ন এখনো দৃষ্টিগোচর হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তবে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার অবস্থা আরও কঠিন হবে।

চালের বাজারের এই অস্থিরতা শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে না, বরং এর প্রভাব দেশের সার্বিক অর্থনীতি এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতাতেও পড়ছে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের খাদ্যভোগ্য পণ্যের মধ্যে চালের পরিমাণ বেশি, তাই এই বাজারের অস্থিরতা তাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন করে তুলছে। খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা আমাদের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

আমরা আশা করি বর্তমান সরকার অতি দ্রুত বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। চালের গুদামজাতকরণ ও সরবরাহে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সরকারের টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চাল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর খাদ্যনীতি নিয়ে ভাবনা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামীণ এলাকায় স্বল্প সুদের ঋণ ও কৃষকদের জন্য সার ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার।

এখনই সময়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি সমন্বিত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের। চালের বাজারকে স্থিতিশীল করতে যদি তারা আগে থেকে পদক্ষেপ নেন, তবে সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সংকটকালীন পরিস্থিতি দূর করতে এবং মানুষের দুর্ভোগ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

জাতির ক্রান্তিকালে চালের ন্যায্যমূল্য অর্জনে আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার খোঁজে, এই সংগ্রামে আমাদের জিততে হবে।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কোপার্নিকাস: আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

১৯ জুলাই ১৯৭১: ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর তিন দুঃসাহসিক অভিযান ও অন্যান্য ঘটনা

বিভেদ-বিতর্ক রেখেও ঐক্য গড়া যায়

১৮ জুলাই ১৯৭১: ভারতীয় সেনাপ্রধান হঠাৎ কলকাতায়

১৭ জুলাই ১৯৭১: দেশজুড়ে মুক্তিবাহিনীর সাহসী অভিযান

১৬ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

জয় বাংলার উচ্ছ্বাস খুঁজি

১৫ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

নতুন আতঙ্ক জিকা ভাইরাস : করণীয় কী?

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ভূতের আক্রমণ

১০

মিথ্যা তথ্যের জালে নতুন প্রজন্ম!

১১

জানুয়ারি থেকে জুন, প্রতিদিন ১১ খুন

১২

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি: জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

১৩

১৩ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

১৪

১২ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা, রণনীতি ও কৌশল নির্ধারণে ঐতিহাসিক সেক্টর কমান্ডার্স সম্মেলন

১৫

১০ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গতিধারা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

১৬

৯ জুলাই ১৯৭১: আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্রতিরোধের গৌরব

১৭

সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা: আনোয়ারার রক্তাক্ত ৭ জুলাই ১৯৭১

১৮

সরিষাবাড়ি ও পাতপাড়া গ্রাম গণহত্যা: জামালপুরের বীরত্ব ও বেদনা

১৯

বান্দাইখাড়া গণহত্যা: নওগাঁর আত্রাইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা

২০