অফিসে বসে কি হঠাৎ করে ঘাড় ও পিঠে ব্যথা বা টান অনুভব করেন কখনও? হয়তো ভেবেছেন, ঘুমানোর সময় বেকায়দায় ব্যথা পেয়েছেন। অথবা কিছুতেই মনে করতে পারেননি ব্যথার কারণ। তবে আপনার মানসিক চাপ কি কারণের তালিকায় স্থান পেয়েছে?
মানসিক চাপ বা টেনশন শুধু মনের ওপরই নয়, শরীরের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। ঘাড় ও কাঁধের পেশিতে ব্যথা এর একটি সাধারণ প্রকাশ।
জেনে নিন মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কীভাবে ঘাড়ে ব্যথা তৈরি করে এবং এর সমাধান কী-
১. পেশির অনৈচ্ছিক সংকোচন বা মাসল টেনশন
স্ট্রেস বা উদ্বিগ্ন অবস্থায় শরীর কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ করে এবং ব্যক্তিকে তার মনে অজান্তেই প্রচণ্ড সজাগ করে ফেলে, এই প্রক্রিয়া শরীরের বিভিন্ন পেশিকে সাধারণের থেকে বেশি শক্ত করে ফেলে। একে ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’ বলা হয়। এই অবস্থাটি মূলত একটি আদিম প্রবৃত্তি। মানুষকে যখন অন্যান্য প্রাণীর মতো জঙ্গলে হিংস্র জন্তুর সঙ্গে মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হতো, তখন থেকেই জীবন বাঁচাতে এই শারীরিক প্রক্রিয়াটি আছে। কুকুর ও বেড়ালের মধ্যে এখনো এটা আপনি খেয়াল করতে পারবেন। তবে শহুরে মানুষের উদ্বেগ এখন অধিকাংশই মানসিক। তাই পেশির ব্যবহার কম। তাই টেনশন বা উদ্বেগের কারণে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশি আপনার ঘাড় ও পিঠে ব্যথা তৈরি করে।
দীর্ঘক্ষণ পেশি শক্ত হয়ে থাকার ফলে এই ব্যথা বাড়তে থাকে। আবার টেনশন হলে অনেকে না বুঝেই ঘাড় ও কাঁধের পেশি চেপে ধরে রাখেন, ফলে ব্যথা শুরু হয়।
২. ভুলভাবে বসা বা খারাপ পশ্চার
সারাদিন কাজের স্বার্থেই ল্যাপটপ ও ফোন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু স্ট্রেসের সময় মানুষ সাধারণত কুঁজো হয়ে, মাথা নিচু করে কাজ করে। আবার সারাদিন বসে কাজ করতে হয় এমন ডেস্ক জবে টানটান মনোভাবের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকেন অনেকে। এই অভ্যাসগুলো আপনার পেশিগুলোর নমনীয়তা কমিয়ে দেয় ও স্টিফ বা শক্ত করে ফেলে, যার ফলে ব্যথা শুরু হয়।
৩. মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথা বা টেনশন হেডেক
মাথা ব্যথার অনেক ধরণের কারণ থাকতে পারে, তবে বেশিরভাগ সময় মানুষ কারণ খোঁজার সময় মানসিক চাপের কথা ভাবেন না। আপনি যে মাথাব্যথাকে মাইগ্রেন ভেবে একের পর এক ব্যথার ওষুধ খেয়ে চলেছেন, সেই মাথাব্যথা হয়তো আসলে টেনশন হেডেক। এই ব্যথা ঘাড় থেকে মাথা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। মাথা ভার লাগে, মনে হয় যেন মাথা চেপে ধরে আছে সেই সঙ্গে আলো বা শব্দে অস্বস্তি লাগে – এইগুলো মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথার লক্ষণ। তবে নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. দাঁতে দাঁত চেপে রাখা
স্ট্রেসের কারণে অনেকে ঘুমের মধ্যে দাঁত পিষে বা চোয়াল শক্ত করে রাখে। ফলে ঘাড়ের পেশিতে টান সৃষ্টি হয় ও তা ব্যথায় রূপ নেয়।
মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট ঘাড়ব্যথা কমানোর উপায়-
১. শক্ত পেশি আলগা করতে গরম পানির ব্যাগ বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন।
২. সহজ কিছু স্ট্রেচিং করুন। মাথা সোজা রেখে থুতনি ভাজ করুন ও ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন; ধীরে ধীরে কাঁধ ঘুরিয়ে পেশি শিথিল করুন। এই ব্যায়ামটি দিনের মধ্যে কয়েকবার করে করুন।
৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করার চেষ্টা করুন। দীর্ঘমেয়াদে এটিই আপনাকে সুস্থ রাখবে।
৪. দিনে ১০ মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
৫. প্রোগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন পেশি শিথিল করার একটি থেরাপিউটিক কৌশল, যেখানে শরীরের বিভিন্ন পেশি গ্রুপকে ক্রমান্বয়ে রিল্যাক্স করানো হয়। এটি স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি ও পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৬. লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন। কম্পিউটার মনিটর চোখের লেভেলে রাখুন, চেয়ারে হেলান দেওয়া স্থানে কুশন বা বিশেষ ধরনের লাম্বার সাপোর্ট ব্যবহার করুন। ঘুমের রুটিন ঠিক করুন, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান ও নরম বালিশ ব্যবহার করুন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
সমস্যা অল্প থাকতে এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। তবে সমস্যা বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কখন বুঝবেন যে ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার-
১. ব্যথা ৩ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।
২. হাত ঝিনঝিন বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
৩. মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বা দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিলে।
মনে রাখবেন, স্ট্রেস শারীরিক ব্যথা বাড়িয়ে দেয়, তাই শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন