সম্প্রতি চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘মেহেদী গ্রুপ’-এর প্রধান মেহেদী হাসানকে বিদেশি পিস্তল ও ৫০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পুলিশের দাবি, তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি ডবলমুরিং থানা থেকে লুট হওয়া একটি পিস্তল। দীর্ঘদিন ধরে এই অস্ত্রটি দিয়ে চট্টগ্রামে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
এই ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এসেছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন থানায় লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র। সেদিন চট্টগ্রামের ১২টি থানায় তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত ৯৪৫টি অস্ত্র এবং ৪৪ হাজার রাউন্ড গুলি লুট করে দুষ্কৃতকারীরা।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭৮৩টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও ১৬২টি অস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের হাতে রয়েছে। নগরবাসীর ধারণা, এসব অস্ত্র দিয়ে এখন চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ করা হচ্ছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের কার্যকর কোনো অভিযান চোখে না পড়ায় জনমনে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
গত ১ মার্চ নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় একটি রিভলভার ও ছয় রাউন্ড গুলিসহ ছিনতাইকারী দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অস্ত্রটিও থানা থেকে লুট হওয়া। একইভাবে, ৫ মার্চ সাতকানিয়ায় একটি লাশের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তল কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর একটি বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, “লুট হওয়া অস্ত্র দ্রুত উদ্ধার করা না হলে এটি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষত, নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই অবিলম্বে কঠোর অভিযান চালানো প্রয়োজন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ থেকে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম যে সব অস্ত্র উদ্ধার হবে। কিন্তু সেই আশার পূর্ণতা এখনো আসেনি।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম) মো. রইছ উদ্দীন জানান, “৫ আগস্টের ঘটনায় লুট হওয়া ৯৪৫টি অস্ত্রের মধ্যে ৭৮৩টি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলমান।”
উল্লেখ্য, অভ্যুত্থানের সময় চট্টগ্রামের ১২টি থানায় সমন্বিতভাবে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে প্রচুর অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যায়, যা এখনও চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাকি অস্ত্র উদ্ধারে আরও জোরালো অভিযান চালাতে হবে। গ্রাম ও শহরের প্রত্যন্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। এছাড়া, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন এবং অস্ত্র সংগ্রহের পথ বন্ধ করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন